মাদক আসরে ধর্ষণের পর খুনের রহস্য উদঘাটন – indexnews.us


গাজীপুরে বহুল আলোচিত স্বপ্না হত্যা মামলার রহস্য তিন বছর পর উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মাদক সেবনের আসরে পালাক্রমে ধর্ষণের পর স্বপ্নাকে খুন করে হত্যাকারীরা। পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়ার প্রতিশোধ নিতে এবং স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিতে এ খুনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতাররা হলেন- গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার বরাব মসজিদ মার্কেট এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ আলী (২৮), একই থানার ভান্নারা এলাকার ফজলুর রহমানের ছেলে মো: নাহিদ হোসেন (২৮) ও বরাব পশ্চিমপাড়া এলাকার মরহুম লাল মিয়ার ছেলে মো: সুজন মিয়া (৪৬)।
পিবিআইয়ের ওই কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় হানিফ স্পিনিং মিলের পুব পাশের বাউন্ডারি সংলগ্ন হাফেজ দেওয়ানের কাঠ বাগানের ভেতরের একটি গর্তে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার দক্ষিণ ভান্নারা এলাকার কেয়াম উদ্দিনের মেয়ে স্বপ্নার (১৯) লাশ দেখতে পান এলাকাবাসী। খবর পেয়ে থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের চাচা মো: আবুল হোসেন কালিয়াকৈর থানায় একটি অজ্ঞাতনামা মামলা করেন।
তিনি জানান, কালিয়াকৈর থানা পুলিশ প্রায় তিন মাসের বেশি সময় মামলাটির তদন্ত করে। কিন্তু কোনো রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় মামলাটি তখন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে পিবিআই গাজীপুর জেলা কর্তৃক তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তদন্ত শুরু হয়। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো: মনির হোসেন মামলাটি প্রায় আট মাস তদন্ত করেন। পরে তিনি অন্যত্র বদলি হওয়ায় মামলাটি পুলিশ পরিদর্শক মো: হাফিজুর রহমান তদন্ত করেন।
পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত মোহাম্মদ আলী, নাহিদ হোসেন ও সুজন মিয়াকে মঙ্গলবার ভোর রাতে কালিয়াকৈর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
তিনি আরো জানান, ঘটনায় জড়িতরাসহ মামলার সব আসামি মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী। নিহত স্বপ্না তাদের সাথে মাদক সেবন করতেন এবং অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন। স্বপ্নার চলাফেরা স্বাভাবিক না থাকায় পরিবারের সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। চট্রগ্রামের জনৈক মাদক ব্যবসায়ী সেখান থেকে মাদকের চালান এনে স্বপ্নার মাধ্যমে বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করতেন। হত্যার প্রায় দুইমাস আগে সুজন ও মজিবর নামে দু’জন মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করান স্বপ্না। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এদিকে চট্রগ্রামের ওই মাদক ব্যবসায়ীর সাথে স্বপ্নার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং স্বপ্না নিজেকে তার স্ত্রী হিসেবে দাবি করতেন। কিন্তু স্বপ্নাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানান চট্রগামের ওই ব্যবসায়ী। একপর্যায়ে পথের কাঁটা দূর করতে সুজন, মজিবর ও তাদের সহযোগিদের সাথে চট্রগ্রামের ওই ব্যবসায়ী স্বপ্নাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে স্বপ্নার সাথে একত্রে বসে মাদক সেবন করেন তারা। আসরে স্বপ্নাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামিরা। পরে তারা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করেন। গ্রেফতার মোহাম্মদ আলী ও মো: নাহিদ হোসেন আদালেত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর আসামি সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হত্যার প্রায় তিন বছর পর হত্যাটির মূল রহস্য উন্মোচিত হলো।